শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪২ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানী ঢাকায় এখনও জেঁকে বসেনি শীত। হালকা শীত পড়ছে দিনের শুরু আর শেষে। এরই মধ্যে পাড়া মহল্লায়, রাস্তার ধারে ভ্যানে কিংবা টেবিলে সাজিয়ে নানান মৌসুমি পিঠার পসরা নিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা।
বাহারি এসব পিঠা পিঠাপ্রেমীদের নজর কাড়লেও অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। তবে বিক্রেতারা বলছেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় দাম বাড়ানো ছাড়া আর কোনও উপায় নেই তাদের।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বেইলি রোড, গ্রীন রোড, বাংলামোটর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় ভ্রাম্যমাণ পিঠার ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, দুপুর আর বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই বিক্রি বাড়তে থাকে পিঠার দোকানগুলোতে। সন্ধ্যা থেকে শুরু করে বেচাকেনা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। সন্ধ্যার হিমেল হাওয়ায় খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে পিঠা খেতে সবাই ভিড় করেন দোকানগুলোতে। দোকানিরাও সিরিয়াল অনুযায়ী একের পর এক ক্রেতার পাতে তুলে দেন তাদের পছন্দের পিঠা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় দেখা যায় রাজধানীবাসীর শীতের পিঠার চাহিদাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ দোকান। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে অস্থায়ীভাবে পিঠা বিক্রি শুরু করেছেন তারা।
রাজধানীর গ্রীন রোড ও বাংলামোটর এলাকায় ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকানগুলোতে দেখা যায় গরম গরম চিতই পিঠা নামছে মাটির চুলা থেকে। ক্রেতারা সারিবদ্ধ হয়ে পিঠা কিনছেন। কেউ নিয়ে যাচ্ছেন, কেউ আবার দাঁড়িয়ে খাচ্ছেন। কোনও চুলায় ভাপাপিঠা, কোনোটিতে চিতই, কোনোটিতে ডিম বা অন্য কোনও পিঠা। হরেক রকমের পিঠার মধ্যে ভাপা আর চিতই পিঠার কদর বেশি দেখা গেছে।
দোকানগুলোতে পিঠার পাশাপাশি থাকছে ১০ থেকে ২০ রকমের ভর্তা। রসুন-মরিচবাটা, ধনিয়াপাতা বাটা, শুঁটকি, কালোজিরা, সর্ষে ভর্তাসহ নানা রকম উপকরণ মিলিয়ে বিক্রি করা হয় চিতই পিঠা। এছাড়া কিছু দোকানে ভাপা আর চিতই পিঠার পাশাপাশি পাওয়া যাচ্ছে পুলি, ভাপা, তেলের পিঠা, পাটিসাপটাসহ হরেক রকম আইটেম।
বাংলামোটর এলাকায় কথা হয় পিঠা বিক্রেতা শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, গত কয়েকদিন ধরে শীত বাড়তে থাকায় পিঠার বিক্রিও বাড়ছে। তিনি বলেন, শীত বাড়লে আমাদের ব্যাবসা একটু বেশি হয়। তবে যে দোকানের ভর্তা যত মজার সে দোকানে ক্রেতারা বেশি যায়। এজন্য কয়েক পদের স্পেশাল ভর্তা রাখলে সব দিনই ক্রেতারা দোকানে ভিড় করে।
এদিকে মোড়ে মোড়ে পিঠার দোকান থাকায় ইচ্ছা হলেই পিঠা খেতে পারার পাশাপাশি বাড়তি দামের অভিযোগও আছে ক্রেতাদের। তাদের মতে অনেক দোকানে পিঠার অযৌক্তিক দাম, যা মেনে নেওয়া যায় না। বেইলি রোড এলাকায় ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকান থেকে পিঠা খাচ্ছিলেন শায়রা নামে এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, একটা চিতই পিঠা এখানে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যে পিঠার খরচ বড় জোর পাঁচ থেকে ছয় টাকা ভ্রাম্যমাণ দোকানে তা ২০ টাকা বিক্রি করা বেমানান।
তবে বিক্রেতাদের মতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়াতে দাম বাড়ানো ছাড়া আর কোনও উপায় নেই তাদের। বেইলি রোডের পিঠা বিক্রেতা লাবনী সাহা জানান, সবকিছুর দাম আগের চাইতে দ্বিগুণ হয়েছে। কম দামে বিক্রি করলে সাইজ ছোট করা লাগে, তখনও ক্রেতারা অভিযোগ করেন।
লাবনী সাহা বলেন, গতবার চিতই পিঠা বিক্রি করতাম ১০ টাকা করে। এবার চিতই পিঠার সাইজ ছোট করে ১০ টাকাই বিক্রি করছি। কিন্তু ভাপা পিঠা ২০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। পিঠার সঙ্গে আবার নানান রকমের ভর্তা দেওয়া লাগে। এগুলো তৈরি করতেও অনেক খরচ পড়ছে। কিন্তু ব্যবসা করতে হলে তো, এগুলো দেওয়া লাগবেই। দাম না বাড়ালে তো আর ব্যবসা করতে পারবো না।